
একদিনের ট্যুরের জন্য বাগেরহাটের সবচেয়ে জনপ্রিয় তিনটি স্পট হল-
১) ষাট গম্বুজ মসজিদ
২) খানজাহান আলী রহঃ এর মাজার এবং
৩) চন্দ্রমহল পার্ক।
———————
ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে বা ট্রেনে খুলনা। বাসে সরাসরি বাগেরহাট ও আসা যায়। তবে বেশি নিরাপদ না, কারণ তারা খুব সকালে আপনাকে নামিয়ে দিবে,অনেক সময় ফজরের আযানেরও আগে। ওখানে কাউন্টার না থাকায় বসতে পারবেন না নিরাপদ জায়গায়। রাতে খুলনা আসার একটাই ট্রেন পাবেন। কমলাপুর থেকে সাতটা এবং বিমানবন্দর থেকে ৭:৩০ এ ছেড়ে আসে , ভাড়া নিবে ৫০৫ টাকা , সকালে ভোরে খুলনা স্টেশন নামিয়ে দিবে ।
আমার মতে কম খরচে বাসে আসাই best হবে ।
সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি বাগেরহাট এর বাসে বা গুলিস্তান থেকে খুলনা গামী লঞ্চ পারাপার টুংগীপাড়া এক্সপ্রেস এ উঠে বসুন । ভাড়া নিবে ৪০০ টাকা চেয়ার কোচ । রাত ১০ টার বাসে উঠলে সকালে খুলনা পৌছাতে পারবেন । আরিচা হয়ে আসা যায় কিন্তু আরিচা হয়ে আসলে জ্যামে বসে থাকার সম্ভাবনা ১০০% তাই ঐ রূটে না আসাই ভাল । ভাড়াও বেশি । ৫৫০ টাকা।

খানজাহান আলী রহঃ এর মাজারের প্রধান ফটক।
যাইহোক গুলিস্তান থেকে টিকিট কেটে টুংগীপাড়া এক্সপ্রেস এ উঠুন (আমার মতে এটা নিরাপদ বেশি হবে)। মাওয়া ঘাটে এসে যখন লঞ্চ পার হবেন বা যাত্রী ফেরি পার হবেন তখন অবশ্যই অবশ্যই ফেরিতে বা লঞ্চে চা খাবেন তাহলে যতটুকু সময় জার্নি করে আসছেন সেই ক্লান্তি কেটে যাবে এবং সামনের যতটুক জার্নি করে পৌঁছাতে হবে সেই ক্লান্তি টুকুও থাকবেনা , সাথে মাওয়া ঘাটের বাতাস তো free ।
সুপার ভাইজারকে বলবেন সোনাডাঙ্গা কাউন্টারে নামবেন। একদম সকালে নামিয়ে দিবে । আপনাকে যেখানে নামিয়ে দিবে তার ঠিক পাশেই দেখতে পাবেন বাস কাউন্টার ওখানে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বাগেরহাটে যাবার বাস দেখিয়ে দেবে । আপনি বাগেরহাটের বাসে সরাসরি উঠে পড়ুন। ওরা টিকিট কাটতে বলবে কিন্তু আপনি আগে টিকিট কাটবেন না, অনেক সময় টিকিট কেটে সিট পাওয়া যায় না সুতরাং টিকিট না কেটেই বাসের সিটে বসে পড়ুন, বাসের ভিতর ভাড়া দিয়ে দেবেন ভাড়া ৬০ টাকা । এবার সরাসরি আপনি যখন বাসে টাকা দেবেন তখন বলবেন যে ষাট গম্বুজ মসজিদ নামবো । সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যেই নামতে পারবেন। ষাট গম্বুজ মসজিদ নামিয়ে দেবার পর ওইখান থেকে আপনাকে টিকিট কেটে ঢুকতে হবে । টিকিট কত আমার সঠিক জানা নেই । তবে ৫০ টাকার বেশি না। কারণ কখনো টিকিট কেটে ঢুকিনি কখনো। ওইখানে ঢোকার পিছন দিকে বিকল্প দুইটা রাস্তা আছে যেটা দিয়ে স্থানীয়রা ওইখানে বিনা টিকিটে প্রবেশ করে ,কিন্তু আপনারা যদি কখনো আগে না আসেন তাহলে বুঝতে পারবেন না যে রাস্তাটা কোনটা ।

খানজাহান আলী রহঃ এর কবর।
উপভোগ করুন ষাট গম্বুজ মসজিদের সৌন্দর্য এবং বিরাট দীঘি । সকালের দিঘির পাড়ে বসে থাকুন দিঘির পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন একদম ফ্রেশ লাগবে । সকাল দশটা ১০-১১ টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করতে পারেন । এরপর ষাট গম্বুজ থেকে বের হয়ে অটোতে করে মাজার চলে যান । খুব বেশি দূরে না, কাছে মাজার। অটোতে দশ টাকা করে নিবে , যদি গ্রুপের লোক ৬-৭ জন থাকেন তাহলে আরও কমে যেতে পারবেন ।
এবার মাজার যেয়ে আপনি দেখতে পাবেন শালিকের কবর ,হযরত খানজাহান আলী রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর মাজার এবং বিরাট দীঘি যা কথিত আছে এক রাতেই নাকি খনন করা হয়েছিল । সেখানে দুপুর দুইটা তিনটা পর্যন্ত অবস্থান করুন। গোসলটা ওখানে সেরে নিন ( দিঘী দেখলে গোসল করতে ইচ্ছা করবে ১০০% )। ওখানে গোসল করার জন্য ছেলে এবং মেয়েদের আলাদা ব্যবস্থা আছে , ওখানে মসজিদে যোহরের নামাজ পড়ে নিতে পারেন । ওখানে আরো দেখতে পাবেন পাহাড়ের মতো কিছুটা উঁচু দিঘির মাটি মনে হবে যেন পাহাড় । সেখানেও ঘুরতে পারেন ভালো লাগবে ।
এবার বের হয়ে যদি আপনারা গ্রুপে ৫ জনের বেশি হন তাহলে মাজার গেট থেকে সরাসরি অটো রিজার্ভ করুন চন্দ্রমহল পার্ক যাবার জন্য। দামাদামি করলে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যেই অটো পেয়ে যাবেন । আর যদি একজন বা দুইজন হন সেক্ষেত্রে বাজেট যদি কম হয় তাহলে বিকল্প বাসের ব্যবস্থাও আছে সে ক্ষেত্রে ভেঙে ভেঙে যেতে হয় , তবে সময় বেশি লাগে না । বাসে যেতে জনপ্রতি ৬০ টাকার মতো খরচ হবে ।
যাইহোক বিকেলের সৌন্দর্য চন্দ্র মহল এ বসে অবশ্যই উপভোগ করবেন। চন্দ্রমহল ঢুকতে টিকিট ৫০ টাকা ।

চন্দ্রমহল
ওখান থেকে সন্ধ্যার একটু আগে বের হয়ে গেটের সামনে ভ্যান থেকে মেইন রাস্তায় চলে যাবেন, দশ টাকা করে নিবে , কমবেশি নিতে পারে তবে সংখ্যায় বেশি থাকলে দামাদামি করবেন কমে যেতে পারবেন । ভ্যানে বলবেন মেইন রোডে যাবেন । ভ্যান থেকে নেমে সরাসরি বাসে সোনাডাঙ্গা চলে আসবেন । ভাড়া জনপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা নিবে । এবার সোনাডাঙ্গা নেমে টুংগীপাড়া এক্সপ্রেস এর টিকিট কেটে রাখুন । এবার সোনাডাঙ্গার বিখ্যাত এবং খুলনার বিখ্যাত আব্বাস হোটেলের বিখ্যাত চুই ঝালের খাসির গোশত খেতে ভুলবেন না । কাউন্টারের পাশেই হেটে গেলে দুই মিনিটও লাগবেনা । যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই দেখিয়ে দিবে ।
এবার বাসে বসেে উঠে পড়ুন এবং আরামে ঘুমাতে ঘুমাতে ঢাকা চলে যান ।
———————
এবার জনপ্রতি টোটাল খরচ বিবেচনা করা যাক-
ঢাকা থেকে খুলনার সোনাডাঙ্গা বা বাগেরহাট = ৪০০ টাকা।
সোনাডাঙ্গা থেকে মসজিদ = ৬০ টাকা (সরাসরি বাগেরহাটের বাসে উঠলে লাগবে না, ওদের বললে মসজিদের নামনে নামিয়ে দিবে)।
ষাট গম্বুজ মসজিদ এন্ট্রি ফি ৫০ টাকা (আর যদি কাউকে জিজ্ঞেস করে ফ্রি রাস্তা দেখতে পারেন তো ভালো) ।
ষাট গম্বুজ থেকে মাজার জনপ্রতি = ১০ টাকা ।
মাজার থেকে ছয়জনের গ্রুপে অটো রিজার্ভ চন্দ্রমহল ২৫০/৬= ৪২ টাকা ।
চন্দ্রমহলে এন্ট্রি = ৫০ টাকা ।
চন্দ্র মহল থেকে রাস্তা = ১০ টাকা ।
মেইন রাস্তা থেকে বাসে সোনাডাঙ্গা = ৬০ টাকা ।
সোনাডাঙ্গা থেকে ঢাকা = ৪০০ টাকা।
মোট ১০৮২ টাকা (খাওয়া বাদে) ।
———————
সতর্কতাঃ মাজারে ঢোকার শুরুতে অনেক দোকান দেখতে পারবেন সুন্দর সুন্দর সৌখিন জিনিসপত্র নিয়ে বসে আছে। কিছু কিনতে হলে তুমুল দর দামি করবেন । আর মাজারে ঢোকার শুরুতেই যারা গেটের দারোয়ান বসে থাকে ওরা বলবে এটা কিনে নিয়ে যান , মোমবাতি ,আগরবাতি ইত্যাদি । যতই বলুক কিছু কিনবেন না।