
একদিনের দুর্দান্ত মেঘালয় ট্যুর!
১৬৯৪/- টাকায় ঘুরে আসুন হালের ক্রেজ ক্রাংসুরি ফলস থেকে।
পাহাড় পর্বত আর ঝিরি ঝর্না ভ্রমন যাদের নেশা আর সাথে রয়েছে পাসপোর্ট কিন্তু পকেটে টাকা আর হাতে সময় কম তারা নির্দ্বিধায় ঘুরে আসতে পারেন বাঙলাদেশের খুব কাছেই ডাউকি বর্ডার সংলগ্ন ক্রাংসুরি ফলস থেকে। গত কয়েক বছর ধরে এই ফলসটির খুব ভাল রিভিউ পেয়ে দেখার খুব স্বাদ মনে জাগতেই পারে।
অসাধারণ এই ঝর্নাটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডাউকিতে অবস্থিত। আসা এবং যাওয়া বলতে খুবই সহজ। খরচটাও নামমাত্র। সিলেটের তামাবিল বর্ডার দিয়ে যারা ভিসার এন্ট্রি পোর্ট নিয়েছেন তাদের জন্য সবচেয়ে সহজ এবং সময় বাঁঁচবে অনেক।
কারন বর্ডার ক্রস করে মাত্র এক ঘন্টার ট্যাক্সি জার্নি। ট্যাক্সি ভাড়া সুনির্দিষ্ট নয়। দরদাম করে নিতে হবে নিজেকেই। যদি ১০জনের টিম যান তবে সবচেয়ে ভাল হয়। আমরা ভাড়া করেছিলাম ২৬০০রুপিতে টয়োটা সুমু। সাথে ঘুরেছি আরো ৩/৪টি অসাধারণ স্পট ঘুরিয়ে ডাউকি বাজারে নামিয়ে দিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ থেকে যেতে হলে তামাবিল ডাউকি পোর্টের ভিসা নিতে হবে। ডাউকি থেকে ট্যাক্সি যোগে ক্রাংসুরি যাওয়া যায়। ডে ট্যুরের জন্যে বৃহস্পতিবার রাতের ট্রেনে উঠে পড়ুন সিলেটের জন্যে। ভোরে সিলেট নেমে স্টেশনের সামনে ব্রেকফাস্ট শেষ করে একটু সামনেই তামাবিলের বাস পাবেন। উঠে পড়বেন। ভাড়া ৬৫ টাকা।
আলতো ঘুমুনিতে ২ঘন্টা পর নিজেকে আবিষ্কার করবেন এশিয়ান হাইওয়ের দুপাশে সুদুর প্রসারিত সবুজ শস্যক্ষেতগুলোর মাঝে। তামাবিল পৌছে গেলে বাস থেকে নেমে হেঁটেই একটু সামনে ইমিগ্রেশন। ইমিগ্রেশনে ডলারের পরিবর্তে টাকা থাকলে একটু উপদেশবাণী দিবে। ভয়ও দিয়ে বলবে ভারতীয়রা টাকা থাকলে ঢুকতে দিবেনা। শুনে কাজ শেষ করে কাস্টমসে ঢুকে পড়ুন।
সব কাজ শেষ করে ভারতে ঢুকে পড়ুন। ওপাশে ইমিগ্রেশন আর কাস্টমস একই সাথে। হেঁটে একটু সামনে যেতে হয়। ভারতের এই পোর্টের ইমিগ্রেশন পুরো হাতেকলমে হয়। এই কাস্টমসেও টাকা না এনে ডলার আনার জন্য উপদেশবাণী দিবে। ইমিগ্রেশন শেষ হয়ে গেলে ক্যাব ১০০রুপি অথবা হেঁটে ১৫মিনিটে ডাউকি বাজার। হেঁটেই চলুন।
এবং সেখানে টাকা/ডলারগুলো ভাঙ্গিয়ে নিবেন। অনলাইন রেট থেকে ১/২টাকা কম পাবেন শ’য়ে। এটাই সর্বোচ্চ কয়েটা দোকানে কথা বল্লে সর্বোচ্চ কত পাবেন ধারণা হয়ে যাবে। ঘড়ি/মোবাইলে সময় আধঘন্টা কমিয়ে ভারতীয় টাইম সেট করে ফেলুন। ১০জনের জন্যে জিপ বুক করুন!
ডাউকি থেকে সময় লাগবে প্রায় এক/দেড় ঘন্টা। ডাউকি টু ক্রাংসুরি ফলসের রাস্তা আপনার মনে দাগ কাটবেই। ইচ্ছে হবে রাস্তার প্রত্যেকটা বাঁকে বাঁকে গাড়ি দাঁড় করায় ছবি তুলতে। গাড়ী যেখানে পার্কিং করে সেখান থেকে প্রায় দশ মিনিট নিচে নামলেই পাওয়া যাবে ক্রাংসুরি ফলসের টিকেট কাউন্টার।
প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৫০রুপি। আর ১৪ বছরের নীচেদের জন্য ২০রুপি। পুরো ফলস এলাকাটি খুব সাজানো এবং গুছানো। আমাদের বাংলাদেশেও অনেক ফলস আমার চোখে পড়েছে, যেগুলোকে চাইলে এমন রুপ দেওয়া যায়।
ফলসের উপরিভাগে একটি শান্তনদী। যার সামনে একটি বাঁধ দেওয়া। আর সেই বাঁধ থেকেই পানি উপচে নিচে পড়েপড়ে সৃষ্টি হয়েছে এই ক্রাংসুরি ফলসের। চাইলে বাঁধের ওপাশে ৫০রুপির বিনিময়ে লাইফ জ্যাকেট পড়ে পানিতে নামা যাবে। বোটিং করতে পারবেন সর্ব্বোচ্চ ৫জন। ভাড়া ঘন্টা ২০০রুপি। নিচে নেমে দেখবেন যৌবনে টুইটুম্বুর ক্রাংসুরি ফলস।
বর্ষাকালে পানির জোর অনেক বেশি থাকে। পুরোটা স্থান জুড়ে পানি পড়ছে। আর সেজন্য এই সময় পানিতে নামতে দেয় না কর্তৃপক্ষ। তবে বর্ষায় পানি ঘোলা থাকে। আর শীতকালে পানির রং গাড়ো সবুজ নীলাভ রুপ ধারন করে। পানির গতি কম থাকলে লাইফ জ্যাকেট নিয়ে নামতে পারবেন ঝর্নার খুমে।
ঝর্না যাদের প্রিয়ো তাদের লিস্টে রেখে দিতে পারেন এই ক্রাংসুরি ফলসকে। নিঃসন্দেহে আপনার চোখ শীতল করবে। এছাড়াও চাইলে রাতে টেন্ট ভাড়া নিয়ে থাকতেও পারবেন। ক্রাংসুরি ফলসের এলাকাটি খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তাই যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না।
মনে রাখবেন, আপনাকে ঘুরেটুরে ৪টার আগেই ডাউকি বাজার পৌছতে হবে। ভারতীয় ইমিগ্রেশন বিকাল সাড়ে ৫টা এবং বাঙলাদেশের ইমিগ্রেশন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সো আপনাকে এই সময়ের ভেতরেই বর্ডার ক্রস করতে হবে।
১০জনের টিমে জনপ্রতি খরচ
ট্রাভেল টেক্স ৫০০/৳
ঢাকা সিলেট ঢাকা ২৬৫+২৬৫= ৫৩০টাকা
সিলেট – তামাবিল সিলেট ৬৫+৬৫=১৩০ টাকা
ব্রেকফাস্ট -৪০টাকা
ক্যাব বুক -২৬০০/১০=২৬০রুপি
ক্রাংসুরি এন্ট্রি টিকিট=৫০রুপি
দুপুরের খাবার=১০০রুপি
মোট ১২০০+(৪১০রুপি÷৮৩X১০০)৪৯৪= ১৬৯৪টাকা। ঢাকা টু ঢাকা ভায়া মেঘালয় একজনের সর্বমোট খরচ ১৬৯৪টাকা!